ভালোবাসি সবাই বলতে পারে কিন্তু সবাই ভালোবাসতে পারে না। আপনি আপনার মনের মানুষকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবেসে চলেছেন। তার প্রতিদানে সেই মানুষটিও আপনার সাথে পাল্লা দিয়ে আপনাকে ভালোবাসে।





তবে তার সেই ভালোবাসা কি লোক দেখানো? এরকম অনেক ক্ষেত্রে হয়। শুধুমাত্র মনের মানুষটিকে খুশি করার জন্য তারা এই ধরনের অভিনয় করে থাকে। বাস্তবে আপনার প্রতি তার মধ্যে কোনো ভালোবাসাই নেই। সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা হতে হলে সেই সম্পর্কের মধ্যে চমৎকার কিছু বিষয় থাকতে হয়। আসুন সে বিষয়ে একটু আলোচনা করি।





আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্য কি তার ভালোবাসার কারণ?
বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ বিষয়। যে মেয়ে বা ছেলে যত বেশি সুন্দর তার ভালোবাসার বাজার ততো ভালো। তবে সেই বাজারে আসল জিনিস খুব কমই আসে। বেশিরভাগই ভুয়া। তাই বলে সুন্দর ছেলেমেয়েরা ভালোবাসবে না এরকম তো হতে পারে না। অবশ্যই ভালোবাসবে তবে সেই মানুষটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে শুনে। আজ আপনার সুন্দর চেহারা দেখে সে আপনাকে ভালোবাসে দুদিন পর আল্লাহ না করুক কোনো এক দুর্ঘটনায় আপনার সেই সৌন্দর্য কোনো কারণে হারিয়ে গেলে সে পালাবে। অতএব সৌন্দর্যকে পুঁজি করে পাওয়া ভালোবাসা থাকার চাইতে না থাকাই ভালো। মন দিয়ে কাউকে জয় করতে পারেন কিনা সেটা চেষ্টা করুন।





উপহার দেয়া জিনিসের মূল্য নিয়ে কথা বলা
ভালোবেসে ছেলে মেয়ে একে অপরকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে থাকে। সেটা অবশ্যই তারা মন থেকে দিয়ে থাকে মনের প্রশান্তি লাভের জন্য, এর বিনিময়ে অন্য কিছু পাওয়ার আশায় নয়। তবে কেউ কেউ আছেন যারা প্রেমিক বা প্রেমিকাকে কিছু একটা উপহার দেওয়ার পরই এর মূল্য নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেন। সে আসলে এই উপহারটি মন থেকে দেয় নি বা মন থেকে গ্রহণ করেন নি। তার কাছে উপহারটি নয়, এর মূল্যই বেশি। এখানে তার কাছে ভালোবাসা মূখ্য নয়, মূল্যটাই মূখ্য বিষয়। কম দামের উপহার হলেই শুরু করে দেয় ঝগড়া। এখানে বোধহয় কোনো ভালোবাসা নেই।





একের কষ্টে অপরের কষ্ট
আজকাল দেখা যায় প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ছোট্ট একটি পিঁপড়া কামড় দিয়েছে এই কথা শোনার পর অপর পক্ষের লোকদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কিন্তু প্রেমিক বা প্রেমিকা যখন মারাত্নক কোনো বিপদে পড়ে তখন তাকে খুঁজেও পাওয়া যায় না। এটা কোনো প্রেম নয়। প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ কখনো আপনার কষ্টে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে না। আপনার কষ্টকে সমানভাবে ভাগ করে নিবে। আপনার মনের মানুষটির সাথে মাঝেমধ্যে আপনার মনের মানুষটির সাথে আপনার কষ্টগুলো শেয়ার করে দেখতে পারেন তার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।
তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আপনি আছেন তো?
মানুষ কাউকে ভালবাসলে তাঁকে সারাটা জীবন নিজের করে রাখতে চাইবে, আর এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। পরিণয় সম্ভব বা অসম্ভব যাই হোক না কেন, ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সত্যিকারের সঙ্গী/সঙ্গিনী মাত্রই করে থাকেন।
তার গুরুত্বের মধ্যে আপনি আছেন তো?
তার জীবনের জরুরী বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার গুরুত্ব কতখানি সেদিকটিও খেয়াল রাখতে হবে। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ই আপনার সাথে শেয়ার না করে নিজে নিজেই সবকিছু করবে, এমন ক্ষেত্রে আপনি কিছুটা সাবধান হতে হবে। কেননা আপনি তার গুরুত্বের মধ্যে নেই।
সম্মানটা জরুরী
ভালোবাসার প্রথম প্রকাশ কিন্তু আসে সম্মান দেয়ার মাধ্যমেই। অনেকেই আছেন যারা কিনা নিজের সঙ্গী/ সঙ্গিনীকে খুব খাটো করে দেখেন। সময়ে–অসময়ে বলে বসেন, “তুমি কি জানো?তুমি কি বোঝো?” তাই না? এটা আর যাই হোক, ভালোবাসা হতে পারে না। যিনি আপনাকে অন্তর দিয়ে ভালবাসবেন, অবশ্যই আপনার বিচার-বুদ্ধি-রুচি-আবেগের ওপরে তার আস্থা থাকবে। আপনার সম্মানকে তিনি কখনোই খাটো করে দেখবেন না।
বন্ধুদের সাথে পরিচয় আছে তো?
মানুষ যখন ভালোবাসে, তখন সেটা সবাইকে জানাতে চায়। এটা কেবল আপনার-আমার ক্ষেত্রে নয়, পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রেই। নিজের ভালো খবরটা, গর্ব করার স্থানটা মানুষ অন্যকে দেখাতে খুব আগ্রহ বোধ করে। আর এইজন্যই লক্ষ্য করুন তো, আপনার বিশেষ মানুষটি কি তার বন্ধুদের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে? সামাজিক কারণে হয়তো পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না সর্বদা, কিন্তু বন্ধুদের সাথে পরিচয় করানোটা খুব সাধারণ আর স্বাভাবিক ব্যাপার। আর সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণও।
আপনাকে বদলাতে চেষ্টা করেন কি?
ভালোবাসা মানে কাউকে বদলে নেয়া না, বা বদলাতে চেষ্টা করা না। আপনি যেমন আছেন, তেমনটা দেখেই তো তিনি সম্পর্ক করেছেন। তাই না? তাহলে এখন কেন আপনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা? তবে যে পরিবর্তন আপনার জন্য শুভ বা আপনার মঙ্গল হবে তাতে , সেগুলো অবশ্যই এই হিসাব নিকাশের বাইরে হবে।
এই প্রেম-ভালোবাসা মূলত টাইম পাস করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। তার মতো যদি আপনারও টাইম পাস করার মনমানসিকতা থাকে তাহলে আপনিও চালিয়ে যেতে পারেন। তবে আপনি যদি প্রকৃত প্রেমিক হন তাহলে শুধু শুধু এই মরীচিকার পেছনে পড়ে না থেকে প্রকৃত প্রেমের সন্ধানে নেমে পড়ুন। আপনি যতই চেষ্টা করুন তার মধ্যে আপনার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি করতে পারবেন না।