ভিক্টর লাস্টিগ। এই নামের সঙ্গে বিশ্বের অনেকেই পরিচিত। হবেন নাই বা কেন, জীবনে কম কীর্তি তো ভিক্টর করেননি। দু’বার বিক্রি করে দিয়েছে প্যারিসের অন্যতম আকর্ষণ আইফেল টাওয়ারকে। শুনে চোখ ছানাবড় হওয়ার জোগাড় হলেও বাস্তবে এটাই ঘটেছে। যারা পুরনো লোহা-লক্কর কেনেন তাদের কাছেই বিক্রি করেছেন ইউরোপীয় সভ্যতার অন্যতম বিখ্যাত নিদর্শনকে। কিন্তু এমন উদ্ভট খেয়াল কেন হয়েছিল ভিক্টরের?





১৮৯০ সালে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন ভিক্টর লাস্টিগ। পড়াশোনা সূত্রেই প্যারিসে আসেন তিনি। তবে পড়াশোনার বদলে চুরি বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। তরুণ বয়স থেকেই হাতসাফাইয়ে তার জুড়ি মেলা ভার। তবে ছিঁচকে চুরিতে আর মন ভরছিল না ভিক্টরের। তাও বড়সড় একটা দান মারার অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বেচে দিলে আইফেল টাওয়ারকেই।





সময়টা ১৯২৫ সাল। ততদিনে ভিক্টরের হাত পাকা হয়ে গিয়েছে। আর প্রবাদেই রয়েছে চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা। নাহ্ ধরা পড়েননি ভিক্টর লাস্টিগ। বরং সফল ভাবেই একটি পুরনো লোহা-লক্কর বেচার দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিলেন আইফেল টাওয়ার। প্রথমে নিজেকে সরকারি অফিসার বলে পরিচয় দিয়েছিলেন ভিক্টর। তারপর, নিয়ম মেনে টেন্ডারও ডাকেন।
এতটুকু সন্দেহও হয়নি কারও মনে। বরং ভিক্টরের প্রস্তাবে আশ্চর্যজনক ভাবে সাড়া দিয়েছিল শহরের সবচেয়ে নামী পাঁচটি সংস্থা। তাদের মধ্যে ভিক্টর বেছে নিয়েছিলেন আন্দ্রে পয়সনকে।





ব্যাস আর কী। এরপর একটি ইংরেজি দৈনিকের খবর পড়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এত সুন্দর আইফেল টাওয়ারের বর্ণনা দিলেন যে, এক কথাতেই ওই সংস্থা রাজি হয়ে গেল টাওয়ার কিনতে। ৭০ হাজার ডলারে ভিক্টর লাস্টিগ বিক্রি করে দিলেন আইফেল টাওয়ার।
এরপর প্যারিস ছেড়ে ভিক্টর বেশ কিছুদিনের জন্য উধাও হয়ে যান। শোনা যায় সে সময়, অস্ট্রিয়ায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন ভিক্টর। কিছুদিন পরে ফের আসেন প্যারিসে। তারপর আবার শুরু চুরি। আরও একবার তিনি আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম চতুর ব্যক্তি এই ভিক্টর লাস্টিগ।





লোককে ঠকানো থেকে জোচ্চুরি, কোনও কিছুতেই কম যান না তিনি। অনায়াসেই লোকের বিশ্বাস জিতে তাদের প্রতারণা করতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
লাস্টিগের ৪৭টি ছদ্মনাম এবং অসংখ্য পাসপোর্ট ছিল। পাঁচটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। ব্যক্তিত্ব ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। তাই একটি গোয়েন্দা সংস্থা লাস্টিগকে ‘তরুণীদের স্বপ্নের পুরুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। আর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তাকে চিহ্নিত করেছিল ‘সম্মানিত অভিজাত ব্যক্তি’ হিসেবে! লাস্টিগের আরেকটি বিশ্বখ্যাত জালিয়াতির ঘটনা ‘রোমানিয়ান বক্স’ নামে পরিচিত।
এই রোমানিয়ান বক্স দিয়ে নাকি দুনিয়ার যেকোনো টাকার নোট নকল করা যেত! ব্যস, মিলিয়নার হতে এরপর আর বেশিদিন লাগেনি লুস্টিগের। কিন্তু একবার যে মানুষকে ঠকিয়ে মজা পেতে শুরু করে, তার কাছে এই ব্যাপারগুলো নেশার মতো হয়ে যায়। এরপর একে একে ঘোড়দৌড়ের নকল স্কিম, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ, টেন্ডার জালিয়াতিসহ কী করেনি সে, সেটিই বড় একটি প্রশ্ন! সূত্র: দ্য ওয়াল।