সূর্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে। প্রচণ্ড এই তাপদাহের মাঝে রোজা রেখে শক্তসামর্থ্য যেকোনো যুবকই প্রায় হাঁপিয়ে যাওয়ার কথা। তার ওপর যদি আবার মাটির বোঝা টানতে হয় তবে তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা হওয়ার কথা।





কিন্তু এসবের মধ্যে ব্যতিক্রম এক মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায়। তার নাম সামসুদ্দীন। বয়স সত্তরের ঘরে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এই ব্যক্তি কোনো কিছুর কাছেই হার মানেননি। এই বয়সে এসেও কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত না পেতে রোজা রেখেও মাটি কাটার মতো কঠিন কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিদিন।





গত মঙ্গলবার উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নে চলমান ‘‘হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি“র আওতায় চলমান কজের পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম কাশেম। সাথে ছিলেন উপজেলার কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরাও। চন্দনবড়ি ইউনিয়নের নলুয়া ঘাগুটিয়া বিলের ধারে গিয়েই নজরে পরে এই বয়জ্যেষ্ঠ কর্মপ্রিয় মানুষের। কাজের এক ফাঁকে ডেকে এনে স্বল্প সময়ের আলাপ হয় সাসুদ্দীনের সাথে।





অল্প সময়ের এই আলাপের সময় তিনি জানান, চন্দন বাড়ি ইউনিয়নের মানারাকান্দী গ্রামে তার বাড়ি। স্ত্রী, এক ছেলেসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের কর্তা তিনি। ভিটে মাটি ছাড়া চাষাবাদের জন্য নেই কোনো জমি। একমাত্র ছেলে ছোট থেকেই পড়াশোনা করেনি। ছোট কাল থেকেই ভবঘুরে ও কর্মবিমুখ হওয়ার কারণে কোনো কাজ না করে বৃদ্ধ এই পিতার পরিশ্রমের টাকায় কেনা খাদ্য খেয়ে আরামেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে।
সামসুদ্দীন জানান, মূলত এই প্রকল্পের আওতায় ২৮ সদস্যবিশিষ্ট দলের সদস্য তার স্ত্রী হেলেনা। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে বদলি শ্রমিক হিসেবে নিজেই এই রমজানে নেমেছেন মাটি কাটার কাজে। এখন পর্যন্ত সকল রোজা রেখেই তিনি মাটি কেটেছেন সক্রিয়ভাবে। এক মিনিটের জন্যও কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন না তিনি।





তিনি আরো জানান, মাটি কাটার জন্য প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ২০০ টাকা হাজিরায় কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০ টাকা দৈনিক হাজিরা হলেও সেখান থেকে পান মাত্র ১৫০ টাকা মাত্র। বাকি ৫০ টাকা থেকে যায় সঞ্চয় হিসেবে।
ইতিমধ্যে চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সামসুদ্দীনের নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। বয়স্ক ভাতার কার্ড আর প্রাপ্ত পরিশ্রমের টাকায় চলে এই কর্মপ্রিয় মানুষের সংসার। স্বল্প সময়ে আলাপ কালে ও তাকে দেখে যা বোঝা যায়ম তিনি নিজের কর্মকে যতটা ভালোবাসেন, তার চেয়ে বেশি সচেষ্ট ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে।





কোনোভাবেই যেন ফরজ তরক না হয় এ জন্য তিনি টাকনুর ওপরে পরেছেন একটি টাউজার। মাথায় টুপি। মুখ ভর্তি সাদা দাঁড়িওয়ালা মানুষটি হালাল উপার্জন খাওয়াকে যত বড় ইবাদাত মনে করেন ততটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ইসলামের ফরজ রোজা রাখাকে। তাই পরিশ্রমের কাজ করেও তিনি ছেড়ে দেননি শরিয়তের ফরজ রোজা। নিয়ম অনুসারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও তিনি আদায় করেন দৈনকি।





সামসুদ্দীন সম্পর্কে চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আব্দুর রউফ হিরন বলেন, আমার কর্মীদের মাঝে সবচেয়ে নিষ্ঠাবান হলেন এই সামসুদ্দীন। রোজা রেখেও নিজের কাজটুকু যেমন করেন যথাযথভাবে, কাজে কোনো ফাঁকি দেন না ঠিক তেমনই অন্যকেও কাজ ফাঁকি দিতে দেন না। সর্বদাই দলের সকল কর্মীর কাজে ফাঁকি দিয়ে হারাম খাওয়া থেকে বিরত রাখেন। যার ফলে সামসুদ্দীন দলে উপস্থিত থাকলে কাজ নিয়ে আর ভাবতে হয় না আমাকে।