আরিফ হোসেন ও শরীফ হোসেন যমজ দুই ভাই। জন্মের পর থেকে দুজন এক’সঙ্গে বড় হয়েছেন, পড়াশোনাও এক’সঙ্গে। একজন অসুস্থ হলে অন্যজনও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসএসসিতে দুজনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। দুজনই কুমিল্লা সরকারি সিটি কলে’জে ভর্তি হন। সেখানেও ফল জিপিএ–৫। এ বছর তাঁরা দুজনই মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আরিফ হোসেন সুযোগ পেয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আর শরীফ হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।





কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মানরা গ্রামের অটোরিকশাচালক বিল্লাল হোসেনের দুই ছেলের এ সাফল্যের খবর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারটি এখন মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত।
দুই সন্তানের এতটা পথ আসার পেছনে বাবার ভূমিকা অনেক। দিনভর, এমনকি রাতের অর্ধে’কজুড়েও সিএনজিচালিত অটো’রিকশা চালিয়েছেন বিল্লাল। সে উপার্জন থেকে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন তিনি। এলাকার মানুষেরও সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।





বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এইচএসসি পাসের পর আমি বিদেশে চলে গিয়েছিলাম। দেশে এসে বিয়ে করি। ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল আরিফ ও শরীফের জন্ম হয়। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না, তখন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করি। আরিফ ও শরীফের ছোট আরও এক ভাই ও বোন আছে। ভাই হাফেজি পড়ছে, বোন চতুর্থ শ্রেণিতে।’





উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর আরিফ ও শরীফ কুমিল্লা শহরের ঠাকুরপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন। সংসার চালাতে বাবার যে কষ্ট হয়, দুই ভাই বুঝতেন। তাই উচ্চ’মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই টিউশনি শুরু করেন দুজন। তখন থেকেই একটু একটু করে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ৪ এপ্রিল ফল প্রকাশের পর জানেন, দুই ভাইয়ের পরিশ্রম সফল হয়েছে। আরিফ হোসেন হয়েছেন ৮২২তম আর শরীফ হোসেন ১ হাজার ১৮৬তম।





জানতে চাইলে আরিফ হোসেন বলেন, ‘দুই ভাই একসঙ্গে দুনিয়াতে এসেছি। একসঙ্গে পড়াশোনা, খাওয়া’দাওয়া, খেলাধুলা, ঘুমানো থেকে শুরু করে সবকিছু করেছি। এখন একই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারলে ভালো হতো। দুজন একসঙ্গে থাকতাম। একই বই শেয়ার করে পড়তে পারতাম। শরীফকে বলেছি ময়মনসিংহে মাইগ্রেশনের জন্য আবেদন করতে।’





শরীফ হোসেন বলেন, ‘আমি আবেদন করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে কি না, জানি না।’
বাবার ইচ্ছা ছিল আরিফ চিকিৎসক হবেন আর শরীফ হবেন প্রকৌশলী। কিন্তু জন্ম’তারিখের মতো দুই ভাইয়ের স্বপ্ন আর লক্ষ্যও মিলে গেছে একবিন্দুতে। তাঁদের মা নাসরিন বেগম বলেন, ‘ওদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ওরা যেন অন্য মানুষের সেবা করতে পারে, অন্যদের স্বপ্ন দেখাতে পারে, সে দোয়া করি।’





দুই ভাইয়ের বক্তব্য—এইচএসসি পরীক্ষা না হলেও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে জিপিএ–৫ পাওয়ায় তাঁরা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
অটোরিক’শাচালক বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে এখন ঈদের আনন্দ। স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা ছাত্রের অর্জনে খুব খুশি। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানও দুই ভাইকে অনুপ্রাণিত করতে ২০ হাজার টাকা উপহার দিয়েছেন।