শিরোনামটি দেখে অনেকেরই হয়তো পার্থ বড়ুয়ার সেই জনপ্রিয় গানের লাইনটির কথা মনে পড়ে গেলো। গানটি খুব জনপ্রিয় হলেও নি:সঙ্গতা বিষয়টি আমাদের জীবনের অপ্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম।আশেপাশের মানুষগুলোর নানা ব্যস্ততার কারণে, কিংবা প্রিয় মানুষের বিয়োগান্তকে মানুষ এই নি:সঙ্গতা অনুভব করে। যা কিনা একটি মানুষকে তিলে তিলে নি:শেষ করে দেয়। যা অনেকেই টের পান না।
বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে আমাদের সময় কাটানোর জন্য অনেক কিছুই আবিষ্কৃত হয়েছে। এর ফলে মানুষে মানুষে যে আত্মিক সম্পর্ক ছিলো তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এখন আর আগের মতো আড্ডা জমে না, একে অপরের সাথে তেমন দেখা হয় না।
মানুষ আজকাল ফেসবুক, মোবাইল ফোন এসবের মাধ্যমে একে অপরের খোঁজখবর রাখছেন। এতে করে যোগাযোগ ঠিকই রক্ষা হচ্ছে কিন্তু মানসিক একটা দূরত্ব অবশ্যই তৈরি হচ্ছে। এই মানসিক দূরত্ব থেকেই মানুষের মনে বাসা বাঁধকে নি:সঙ্গতা বা ডিপ্রেশন নামক ব্যধি।
এই ডিপ্রেশন থেকে এক সময় দেখা দেয় অন্যের সান্নিধ্যে যাওয়ার ভীতি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইলে রেগে যাওয়া, নিজের আত্মমর্যাদাবোধ নিচে নেমে যাওয়া, অন্যের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হওয়া,
সামাজিকতাকে ভয় পাওয়া, খাওয়া-দাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, লেখাপড়ায় নিয়মিতভাবে খারাপ করতে থাকে, ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, নেশার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় প্রভৃতি।
নি:সঙ্গতার কারণে মানুষ যখন ডিপ্রেশন রোগে আক্রান্ত হয় তখন চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে বুঝতে দেরি হলে জীবন নামক মহামূল্যবান জিনিসটিও অনেক সময় হারিয়ে যায়।
তাই সকলের উচিত একাকিত্ব সময়টাতে অন্য কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কিছুতেই একাকিত্ব বিষয়টিকে নিজের মধ্যে জেকে বসতে না দেওয়া। আসুন একাকিত্ব সময় কাটানোর মতো কিছু বিষয় জেনে নিই –
গান শুনে, বই পড়ে, টিভি দেখে কিংবা প্রিয় মুভি দেখেও সময় কাটানো যায়। এগুলো আমাদের নীরব বন্ধু। এদের সাথে ভাব বিনিময় না করা গেলেও একাকিত্ব সময়ে এরা খুব ভালো সঙ্গী হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
নিজের মধ্যে নিজ সম্পর্কে যখনই কোনো নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেবে সেটিকে প্রশ্রয় না দিয়ে সাথে সাথে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। নিজের দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করে নিজেকে সকলের কাছে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। নিজেকে নিজেই অবমূল্যায়ন করলে অন্যরা আপনাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবে না। তাই নিজেকে কিছুতেই অন্যের হাসি-ঠাট্টার পাত্র হতে দিবেন না।
অন্যরা আপনার খোঁজখবর নিক বা না নিক। আপনি সময় পেলে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ নিন। এর ফলে তাদের সাথে আপনার সম্পর্কের কোনো দূরত্ব তৈরি হবে না। এবং আপনি নিজেও মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন।
সামাজিক কাজে সবসময় নিজেকে জড়িত রাখতে হবে। ভয়, লজ্জা বা টেনশনের চিন্তা করে এগুলো এড়িয়ে গেলে সামাজিকভাবে আপনি একা হয়ে যাবেন।
ব্যস্তদের ব্যস্ত থাকতে দিন। অন্যের পিছনে না ঘুরে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। সময় হলে সবাই আপনার খোঁজ নিবে।
বন্ধু মহলে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে যে কেউ আপনার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে যেকোনো কথা শেয়ার করতে পারে। এর ফলে বন্ধুমহলে আপনার বিশেষ একটি স্থান তৈরি হবে। যা আপনার নি:সঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
একাকিত্ব সময়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের চা, পান, সিগারেট এমনকি মারাত্মক নেশার প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই এগুলোকে কখনোই নিজের ধারে কাছে ভিড়তে দেবেন না।
আমরা যারা সারা দিন অতি ব্যস্ত সময় পার করি তারা চাইলে নি:সঙ্গতা বা ডিপ্রেশন নামক ব্যধিটি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারি। কাজ শেষে সম্ভব হলে কাছের মানুষগুলোর সাথে দেখা করে তাদের নি:সঙ্গতা দূর করতে পারি, নাহলে ফোনে অন্তত খোঁজখবর নিয়ে তাদের মনে একটু প্রশান্তি এনে দিতে পারি।
অনেক মানুষই তাদের প্রিয় বন্ধু, প্রিয় স্বজন বা প্রিয় মানুষটির মুখের হাসি কিংবা মুখের একটু শব্দ শোনার জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে। দিনশেষে যখন তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না তখন তাদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। এথেকেই তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন নামক ব্যধিটি বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই সকলের উচিত প্রিয় মানুষটির উপলব্ধি বোঝা।