স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীর চর্চা এসব আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখে। তেমনি এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনার অজান্তেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন অভ্যাসগুলো অজান্তেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করছে।
১.অতিরিক্ত ভ্রমন
আজকাল যেন দুনিয়াটা ঘুরে দেখা একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। আর যে যত বেশি স্থান দেখতে পারবে ততই যেন খ্যাতি।
কিন্তু আপনি যদি প্রায়ই ভ্রমণ করেন বা আপনার যদি এমন কোনো চাকরি থাকে যার জন্য আপনাকে প্রচুর ভ্রমণ করতে হয় তাহলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ নতুন নতুন প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু, পানি
২.দেহের অতিরিক্ত ওজন
শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হওয়া মানেই হচ্ছে শরীরে রোগের ছড়াছড়ি। আর এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বিজ্ঞানীরা জনান, এজন্য মানুষের বয়স ও উচ্চতা অুযায়ী যতটুকু ওজন দরকার, তার চেয়ে তিন কেজি বেশি হলেই ডায়াবেটিস হওয়ার আশংকা ২৫-৩০ ভাগ দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার ফলে হরমোনগত ভারসাম্যও নষ্ট হয়। আর তার ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩.নিঃসঙ্গতা
নিজের মতো একা থাকা আর একাকী বোধ করার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিঃসঙ্গতার বোধ হৃদয়ের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমন অনেকে আছেন যারা তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময় ঘরে একাকি কাটিয়ে দিতে পছন্দ করেন।
এতে মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা কমে যায়। কেননা একাকি থাকার ফলে নিঃসঙ্গতার বোধ এবং অবসাদ বেড়ে যায়। মস্তিষ্কে ডোপামিন এর মতো উপকারী হরমোন নিঃসরনের হার কমে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
ডেনমার্কের ‘কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’য়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে একাকিত্ব হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং মৃত্যু ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুন করে তুলতে পারে। একা থাকার তুলনায় নিজেকে একা অনুভব করা হৃদরোগীদের স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে।
ডেনমার্কের কোপেনগেহেন ইউনিভার্সিটি হসপিটালের পিএইচডি’র শিক্ষার্থী অ্যানি ভিনগার্দ ক্রিস্টেনসেন বলেন, “আগের তুলনায় বর্তমানে নিঃসঙ্গতা বোধ বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচুর মানুষ একা বাস করেন।”
৪.অপুষ্টি
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি। আপনি যদি এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস মেনে না চলেন যাতে সব ধরনের জরুরি পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে, যেমন, ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর চর্বি, আঁশ, ইত্যাদি তাহলে আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিবে বা আপনি অপুষ্টিতে আক্রান্ত হবেন।
এতে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। সুতরাং সুস্থ্য থাকতে চাইলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৫.অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার
সাধারণত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে আমরা বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি। এই অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে আমাদের রোগ মুক্তিতে সাহায্য করে।
যদি সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা হয় তাহলে ব্যাক্টেরিয়াগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয় না এবং বেঁচে যাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে এই ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে উক্ত এন্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।
আর এ অবস্থাকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলে। পাশাপাশি অহেতুক এবং অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার রক্তের শ্বেতকণিকাগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়।
৬.অপর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আর কম ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটা কতোটা ক্ষতিকর তা সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
দ্য স্লিপ কাউন্সিলের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বা তার চেয়ে কম ঘুমান। ফলে তাদের শরীর, মন ও মস্তিষ্কে এর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং ধীরে ধীরে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাজুক হতে শুরু করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা দিনে আট ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। কারণ অপর্যাপ্ত ঘুম অস্বাভাবিক মৃত্যুর আশঙ্কা ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।