য়ঃসন্ধিতে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে একে অপরের প্রতি কৌতূহল ও আকর্ষণ খুবই স্বাভাবিক। সন্তানের প্রেম নিয়ে তাই অযথা উতলা না হয়ে বন্ধুর মতো ওর পাশে থাকুন





হাতে মোবাইল ফোন, মুখে ঈষৎ লাজুক হাসি। এছাড়াও রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারও সঙ্গে ফোনে ব্যস্ত আপনার সন্তান? ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে একে অপরের প্রতি কৌতূহল ও আকর্ষণ খুবই স্বাভাবিক। সন্তানের প্রেম নিয়ে তাই অযথা উতলা না হয়ে ওর পাশে থাকুন বন্ধুর মতো।





তাছাড়া, বর্তমান যুগে ছেলে-মেয়েদের যোগাযোগ আর মেলামেশার ক্ষেত্র এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে চাইলেও অবশ্যম্ভাবী এই প্রাকৃতিক ধারাকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবে, ছেলেমেয়ের প্রেমে পড়ার ব্যাপারকে অবিভাবক হিসেবে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করাও যায় না। তাই জেনে নিন কীভাবে সামলাবেন সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালীন প্রেম।





কোনভাবেই উদ্বিগ্ন হবেন না
ঘাবড়াবার কিছু নেই। আবার এজন্য সন্তানকে মারধর করতেও যাবেন না। কারও প্রতি আকর্ষণ বোধ করা কোনও অন্যায় নয়। কৈশোরে কাউকে ভালো লাগা খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক ব্যাপার। এই সময় রাগারাগি না করে, যথাসম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে সন্তানের পাশে দাঁড়ান। নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়ে বন্ধুর মতো কথা বলে ওর দুর্বলতার ব্যাপারে জানবার চেষ্টা করুন।
নিজেও একটু প্রগতিশীল হোন
যুগ পালটেছে। তাই পুরনো, বস্তাপচা ধ্যান-ধারণার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তানের প্রথম প্রেম নিয়ে সংবেদনশীল মনোভাব বজায় রাখুন। ক্ষুব্ধ না হয়ে ওর পাশে থাকার চেষ্টা করুন। আপনার ছেলে বা মেয়ে যদি আর একটি ছেলে বা মেয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, সেটা নিন্দনীয় কিছু নয়। তাই ওর এই অনূভুতিকে তুচ্ছ না করে বরং পাশে থাকুন।





লক্ষ্যচ্যূত হতে দেবেন না
তবে প্রেম যেন পড়াশোনার পথে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। স্রেফ একটা সম্পর্কের জন্য অনেক ছেলে-মেয়েই নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে, এমন দৃষ্টান্ত কিন্তু ভূরিভূরি রয়েছে। সন্তানের পড়াশোনার সময় মোবাইল হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। আবার সময়মত আপনার সন্তানকে তার বিশেষ বন্ধুটির সঙ্গে গল্প করতেও বাধা দেবেন না। অর্থাৎ পড়াশোনা ও রোজকার কাজ ঠিক রেখেই সব চলছে, মূলত এটি নিশ্চিত করুন।





নজর রাখুন
এটা নয় যে সন্তানের ওপর আপনি চব্বিশঘণ্টা খবরদারি করবেন। ওকে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে ভাবতে চেষ্টা করা উচিত। তবে ও কারসাথে মিশছে, কথা বলছে কিংবা কাকে ঠিক কী ধরনের ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে তার দিকে অল্প হলেও নজর রাখতে হবে।





কারণ প্রেম করার উছিলায় কোনও সুবিধাভোগী বা খারাপ অভিসন্ধির কেউ আপনার সন্তানের বিপদেরও কারণ হতে পারে। পাশাপাশি, নানা ধরনের অবৈধ কাজকর্মেও লিপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই। শুধু তাই নয়, আপনার সন্তান (বিশেষত কন্যাসন্তান) প্রেমের নামে অশ্লীল মন্তব্য বা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কিনা, সেটাও যাচাই করতে হবে। তাছাড়া, এসময়ে আশেপাশে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে সেসব সম্পর্কেও জানিয়ে রাখুন ওকে।





বন্ধুত্বের হাত বাড়ান
কৈশোরের প্রেম একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তাই এই ব্যাপারে যতটা সম্ভব সংবেদনশীল হওয়ার চেষ্টা করাই শ্রেয়। এই সময় বাচ্চারা সাধারণত খুব আবেগপ্রবণ হয়। নিজের সম্পর্কে নিয়ে নিরাপত্তায়হীনতায় ভোগে।
এই ধরনের সম্পর্ক সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। তবে, প্রথমবার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর আপনার সন্তান যাতে অত্যধিক বিষণ্ণতা বা বিমর্ষতার শিকার না হয়ে পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখুন। দেখুন, আবেগের বশে সে কোনও হঠকারিতা করে বসছে কিনা।





বহু কমবয়সী ছেলেমেয়েই ব্যর্থ প্রেমের হতাশা সামলাতে না পেরে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যার ফল মর্মান্তিক হতে পারে। এই সময় তাই যতটা সম্ভব ওর পাশে থাকার চেষ্টা করুন, সমবেদনার হাত বাড়িয়ে দিন। অভিভাবক নয়, এক্ষেত্রে একজন বন্ধুর মত গল্প করে পরিস্থিতি জেনে নিয়ে ওকে সঠিক পরামর্শ দিন।