প্রেম-ভালোবাসার ক্ষতিকর দিকের যেমন অভাব নেই, তেমনি উপকারী দিকেরও অভাব নেই। ভালোবেসে কেউ হয়েছে নি:স্ব আবার কেউবা মনের মানুষটিকে নিয়ে সুখ-শান্তিতে ঘর সংসার করছে।





এগুলোই ভালোবাসার প্রধান দুটি দিক। এখন আর প্রেম-ভালোবাসা প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ২০ বছর আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা রোমান্টিক প্রেমের তিনটি রকমফেরও করেছেন। অন্তরঙ্গতা, দায়বদ্ধতা, প্রতিশ্রুতি, প্যাশন—সব উপকরণ মিলিয়েই রোমান্টিক প্রেম।
বিজ্ঞানীদের মতে ভালোবাসা হচ্ছে রসায়নের খেলা। যা মানুষের শরীরে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। যেমন ভালোবাসার ফলে মানুষের মধ্যে অনুরাগ ও আসক্তি এই দুটো জিনিস লক্ষ্য করা যায়। এগুলো মানুষের মনের কোনো বিষয় নয়। ‘এনডোর্ফিন’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের কারণে মানুষের মগজে অনুরাগ ও আসক্তি সৃষ্টি হয়।





এই ‘এনডোর্ফিন’ মানুষের দেহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে, ব্যথা উপশম করে, চাপ প্রশমিত করে, বার্ধক্যের প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। শুধু তাই নয় ব্যায়াম ও শরীরচর্চাকে আরও উদ্দীপ্ত করে এই রাসায়নিক পদার্থটি।
দৌড়বিদদের জন্য এই রাসায়নিক পদার্থটি আরও উপকারী। এই রাসায়নিক পদার্থটির কারণে দৌড়ের সময় নিজেকে নমনীয় ও শক্তিমান মনে হয় এবং ব্যথা ও অবসন্নতা বোধ ঘটে না।





যখন ভালোবাসা ও এনডোর্ফিন নিঃসরণ উদ্দীপ্ত করে ভালোবাসার উষ্ণ যন্ত্রণা বরং শক্তি দেয় মানুষকে। এনডোর্ফিন তীব্রতর হয়; আরও রাসায়নিক ক্রমে চড়া হয়ে ওঠে, আসে আমোদ উৎপাদক হরমোন রাসায়নিক ‘ডোপামিন’ ও নরইপিনেফ্রিন, এই নিউরোট্রান্সমিটারটি ইতিবাচক প্রণোদনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ‘রোমাঞ্চকর ধেয়ে আসা’ কারও জন্য হয় হিতকরী, কাউকে করে বড় উদ্দীপ্ত; কেউ কেউ ভালোবাসাতে হয় আসক্ত।
সিক্রেটস অব দ্য সুপার ইয়ং বইটি লিখে খ্যাত নিউরোসাইকোলজিস্ট ডেভিড উইকস বলেন, জীবনসঙ্গী যাঁরা ঘন-ভালোবাসা করেন প্রায়শ; তাঁদের আয়ু বেশ বাড়ে।
ডা. মাইকেল ওডেন্ট বলেন, কেবল ঘনিষ্ঠ ভালোবাসা নয়, দৈহিক সংস্পর্শ, নিঃসৃত করে এনডোর্ফিন; যেমন, হরমোন অক্সিটোসিনও। মানুষের মধ্যে বন্ধন স্থাপনে অক্সিটোসিনের ভূমিকা অনন্য। এই দুটো রাসায়নিক প্রাকৃতিক আফিমের মতো কাজ করে; নেশা ধরায় মনে, আসক্তি টানে, সুস্থিত করে রোমান্টিক সম্পর্ক। অন্তরঙ্গ স্পর্শ, যেমন, হাতে হাত ধরা, হাত ধরে হাঁটা, প্রেমিকের গালে টোকা দেওয়া—এমন আন্তরিক ভালোবাসা শরীরে রোগ প্রতিরোধ অ্যান্টিবডি বাড়ায়; গ্রোথ হরমোনকে প্রণোদিত করে।
বিখ্যাত হূদেরাগ বিজ্ঞানী ডিন অরনিশ লিখেছেন, আমাদের অসুস্থ হওয়া ও ভালো থাকা, আমাদের বিষণ্ন হওয়া, আমাদের সুখী হওয়া—এসব কিছুর মূলে রয়েছে ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা, আমাদের রোগভোগ ও নিরাময় এসবের মূলেও রয়েছে এই দুটো জিনিস। রোগীর হূদ্যন্ত্র ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের ওপর খাদ্য, ধূমপান, বংশগতি ও ব্যায়ামের যেমন প্রভাব, ভালোবাসারও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব।