সৌন্দর্য চর্চায় অলিভ অয়েল এবং মুখের যত্ন।

ক্রিট দ্বীপে খৃষ্টপূর্ব ২৫০০ বছর আগে থেকে অলিভের চাষ হতো, এরকম প্রমাণ পাওয়া যায়, এ থেকে বোঝা যায় যে, এমনকি খৃষ্টপূর্ব ৩৫০০ সালেও যে অলিভ গাছের সম্পর্কে মানুষ জানত তাও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই, আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, কত পূর্বেও অলিভের কার্যকারিতা এবং, উপকারিতা সম্পর্কে জানত মানুষ।

আমরা সবাই কম বেশি জানি আগেকার দিনে আমাদের মা দাদীরা সরিষার তেল দিয়ে তাদের রূপচর্চা করতেন। কিন্তু এটা হয়ত অনেকেই জানিনা সেসময় অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলও বহুল প্রচলিত ছিল। এই তেলের ব্যবহারই হয়ত তাদের চাকচিক্যময় ত্বকের গোপন রহস্য।

অলিভ অয়েলের নাম শুনে কি চোখের সামনে তেল চটচটে একখানি মুখ ভেসে উঠছে? একটু ট্রাই করেই দেখুন, আপনার ভ্রান্ত ধারণার অবশ্যই অবসান ঘটবে। জলপাইয়ের তেল জলপাই থেকেই পাওয়া যায়। অলিভ অয়েল ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিডে ভরপুর তাই শুধু হার্টের জন্য নয় পুরো মানব দেহের জন্যই উপকারী।

এটি সেনসিটিভ স্কিনের জন্যও নিরাপদ। অলিভ অয়েল চুলে পুষ্টি যোগায় আর অলিভ অয়েলে বিদ্যমান ভিটামিন ই এবং এ তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলের গুনাগুণ এখানেই সীমাবদ্ধ না। আজ আমরা এমন অনেক উপকারি টিপস জানবো এই লেখার মাধ্যমে।

অলিভ অয়েল বাথঃ

সোফিয়া লরেন, লাস্যময়ী সুন্দরী ইটালিয়ান অভিনেত্রী একবার নিজের সৌন্দর্যের গোপন রহসের পেছনে অলিভ অয়েল বাথের অবদানের কথা জানিয়েছিলেন। এক বালতি পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন আর গোসলের পর অনুভব করুন তুলতুলে নরম, সিল্কি ত্বকের স্পর্শ অথবা আপনি যদি গোসলের আগে অভিল অয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করে নেন তাহলেও সেই একই ফলাফল পাবেন।

নখের ভঙ্গুরতা রোধঃ

শখ করে নখ বড় করেছেন কিন্তু এত সাবধান থাকা স্বত্তেও নখ ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর মন খারাপ করবেন না। তেলটিকে হালকা গরম করে নিন তারপর নখ গুলো ডুবিয়ে রাখুন ৫-১০ মিনিট। তারপর দেখুন আপনার নখগুলো কেমন শাইন দিচ্ছে আর এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে নখগুলো শক্তও হয়ে যাবে।

আই ক্রিমঃ

অলিভ অয়েল চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা ত্বককে হাইড্রেট করে আর নরম করে তোলে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার রিং ফিঙ্গার দিয়ে আলতো হাতে অলিভ অয়েল বুলিয়ে দিন। অতিরিক্ত তেল নরম টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে পারেন। আপনার চোখ থাকবে সবসময় উজ্জল এবং আকর্ষণীয়।

পা ফাটা সমস্যার সমাধানঃ

পায়ের দুরবস্থার কারণে কারও সামনে পা বের করতে বিব্রত হচ্ছেন? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন, তারপর মোজা পরে ঘুমান। সকালে নরম তুলতুলে পায়ে পছন্দের স্যান্ডেল গলিয়ে চলে যান গন্তব্যস্থলে।

ঠোঁটের যত্নে অলিভ অয়েলঃ

নিম্নমানের কসমেটিকস বা সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে আপনার নরম কোমল ঠোঁট তার কোমলতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে আসে, হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা। তাই নিয়ম করে যদি অল্প অলিভ অয়েল ঠোঁটে বুলিয়ে নেয়া যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে।

মেক-আপ রিমুভারঃ

জমকালো সাজে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন। এবার সঠিক উপায়ে মেকা-আপ তোলার পালা। আঙ্গুলের ডগায় অথবা কটন প্যাডে অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। তারপর সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে সমস্ত মেক-আপ তুলে ফেলুন। তারপর ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে শেষ করুন আপনার মেক-আপ তোলার প্রক্রিয়া। যাদের সেনসেটিভ স্কিন তারা নিরাপদে মেক-আপ তোলার কাজ সেরে নিতে পারেন।

মাস্ক – একটি ডিমের কুসুমের সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল আর ৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর মুখে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম পানি তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঠাণ্ডা পানি খুলে যাওয়া পোরস বন্ধ করে। নরমাল অথবা শুষ্ক ত্বকে এই মাস্ক আর্দ্রতা বজায় রাখবে সেই সঙ্গে নরম কোমল করে তুলবে।

ময়েশচারাইজার – অলিভ অয়েলে আছে linolic acid, যা পানি বাষ্প হতে দেয়না। তাই ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/৪ কাপ ভিনেগার আর ১/৪ কাপ পানি মিশিয়ে একটি সলিউশন তৈরি করুন যা রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিমের মত ব্যবহার করতে পারবেন। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম করে, ভিনেগার ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

সান প্রোটেকশন – অভিল অয়েলে ভিটামিন এ এবং ই আছে সেই সঙ্গে ৩ রকমের antioxidants আছে, যা আপানাকে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। তাই যদি বাইরে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েলের প্রলেপ দিয়ে বের হন তবে সান্ টান থেকে অনেকটাই মুক্তি লাভ করবেন।

ব্রণ প্রতিরোধক – শুনে হয়ত অবাক হবেন ব্রণের চিকিৎসায় তেলের ব্যবহার। কিন্তু অলিভ অয়েল ব্রণের বংশ ধ্বংস করার জন্য উপকারী।

৪ টেবিল চামচ লবণের সাথে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্ট ২ মিনিট ধরে মুখে ম্যাসাজ করুন। এভাবে এক সপ্তাহ করুন। আপনি অবশ্যই পরিবর্তন দেখতে পারবেন। লবণ exfoliation করে pore পরিষ্কার করে আর অলিভ অয়েল মুখের আর্দ্রতা ধরে রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.