অনেকদিন প্রচেষ্টায় কোন শক্ত কাণ্ড রয়েছে এমন গাছের স্বাভাবিকত্ব বজায় রেখে আকারে ছোট রাখার পদ্ধতিকে বনসাই বলা হয়। শুধু ছোট গাছ ছোট পাত্রে বসানো হলেই তাকে বনসাই বলা যাবে না। গাছের আকারের সঙ্গে মিল রেখে পাত্রের আকার স্থির করতে হবে। বনসাই তৈরীর প্রথা বিশ্বে প্রথম উৎপত্তি হয় চীন দেশে। বর্তমানে এ ধরনের গাছ করার প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
দেশ-বিদেশে অনেক বনসাই করা গাছ আছে যা শিল্প সৌন্দর্য অতুলনীয়। আর বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই শিল্পীর বামন গাছ তৈরীর কর্ম নৈপুন্যে। বনসাই এর উৎপত্তি কোন পাত্রে ছোট গাছ বসানোকে চীনা ভাষায় বলা হয় ‘পান সাই’। যেটা জাপানি প্রথার সঙ্গে কিছুটা অমিল ছিল। চীনারা বড় পাত্রে একটি গাছ না বসিয়ে একাধিক গাছ ও জঙ্গল তৈরী করতো। এক কথায় সুন্দর একটি খন্ডিত প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবতারনা। জাপানিদের বেশীরভাগ গাছই একটি পাত্রে একটি গাছ। একটি পাত্রে একাধিক গাছ খুব কমই দেখা যায়। অবশ্য বনসাই পদ্ধতিতে গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি জাপানিদের দ্বারাই হয়েছে। বনসাই পদ্ধতিতে গাছ করাকে জীবন্ত শিল্পকলা বলা হয়।
এর কারণ শিল্পকলার প্রয়োগ হয় একটি জীবন্ত গাছের উপড়।অন্যান্ন বিষয়ে শিক্ষার নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে কিন্তু এই কাজে যতদিন গাছটি বাঁচবে ততদিন পর্যন্ত ভালোভাবে তার পরিচর্যা করতে হয়।গাছ নির্বাচনের কাজটিও ভালোভাবে করতে হয়।তাই বেশি সময় বেঁচে থাকে এমন গাছ নির্বাচন করা প্রয়োজন। বনসাই উপযোগী গাছ এবং উৎপাদন কিছু কিছু গাছ বনসাই শিল্পের জন্য উপযোগী যেমন- বট, বকুল, শিমুল, ঝাউ, ক্রিয়েন্টা, বোগেনভিলা, ব্রাসিয়া, ফাইকাস বেঞ্জামিনা ইত্যাদি।এই ধরণের গাছ সংগ্রহ করেও বনসাই গাছের সংগ্রহ বৃদ্ধি করা যায়।
বনসাই বীজ ও কলম উভয় ধরনের গাছ দ্বারাই করা যায়। বীজ থেকে হওয়া গাছগুলো হলো অশ্বত্থ, পাকুড়, তেঁতুল, শিমুল, শিরীষ ইত্যাদি। কলমের গাছের ক্ষেত্রে ভাল হবে ফলের গাছ, ঝাউ, ক্রিসেন্টা, ক্রিউজেটা ও ফাইকাস। তবে এই কাজ শুরু করতে হবে দু-এক বছর বয়সের গাছ দিয়ে, কারণ ছোট গাছের কান্ড নরম থাকার কারনে তারের সাহায্যে ভালোভাবে ডালের কান্ডের পরিবর্তন করে সুন্দর রূপ প্রদান করা যায়। ডাল বেশী শক্ত হয়ে গেলে প্রয়োজন মতো আকৃতি তৈরী করা খুবই সমস্যা হয়ে যায়। বেশী বয়সের গাছের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশী হয়ে থাকে। অল্প বয়সী গাছের কোন ডাল ভেঙ্গে গেলে পুনরায় তা গজানোর সম্ভাবনা থাকে, যা বয়স হওযা গাছের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
সাধারণভাবে বনসাই করার জন্য গাছ ছোট পাত্রে বসানো হয়। কিন্তু প্রথম থেকে গাছকে ছোট পাত্রে বসানো হলে কিছু অসুবিধার সন্মুখীন হতে হয়, ছোট জায়গার অল্প খাবার খেয়ে গাছের বৃদ্ধি অনেক কম হয় যাতে কান্ড শেকড় মোটা হতে দেরী হয়। বৃদ্ধির অভাবে ডালের সংখ্যা কম হওয়ার ফলে ডালের বিন্যাস ঘটিয়ে গাছটিকে তৈরী করতে সময় বেশী লাগে। বনসাই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে গাছকে একই জাতীয় গাছের প্রতিকৃতি তৈরী করার জন্য করণীয় কাজগুলি যথাক্রমে মূল, শেকড় কাটা, ডালগুলি যথাযথ বিন্যাস ও কান্ডের সোজা গঠনের পরিবর্তন করে বয়স্ক চেহারার ছাপ নতুন গাছের উপর ফুটিয়ে তোলা। এই সব অসুবিধার কথা চিন্তা করে বনসাই শুরুর প্রথম দিকে ছোট পাত্রে না রেখে অপেক্ষাকৃত বড় পাত্রে বসানো উচিত। বড় গাছের কান্ড বনসাই পদ্ধতি প্রয়োগের সাহায্যে ইচ্ছানুযায়ী আকৃতিতে গঠন করা সুবিধাজনক।
ডালের সংখ্যা বেশী হয়। অপ্রয়োজনীয় ডাল কেটে বাকিগুলিকে ভাল ভাবে সাজিয়ে নেয়া যায়। পরিচর্যা এবং ডিজাইন ধৈর্য সহকারে প্রয়োজনীয় কাজগুলি যথাযথ সময়ে করতে হবে। যেমন-সংগ্রহ করা গাছ টবে শাখাহীন লম্বা হতে থাকলে কঁচি দিয়ে আগাটি কেটে দিতে হবে। কারণ শাখাহীন গাছের বনসাই ভাল দেখাবে না।সঠিক পদ্ধতিতে ডাল বিন্যাস করে বনসাই এর আকার তৈরী করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ডাল বিন্যাসের কাজ চলাকালীন সময়ের মধ্যেই মূল শেকড় কাটার কাজটিও সম্পন্ন করতে হবে। মূল শেকড় কাটার পর গাছটিকে ওই একই টবে কিছুদিন রাখায় কোনও সমস্যা নেই। পরে গাছটিতে বনসাই রূপের প্রভাব লক্ষ্য করা গেলে সাধারণ পাত্র থেকে সঠিক মাপের বনসাই ছোট পাত্রে বদল করে নিতে হবে। বনসাই করা গাছের রূপ কয়েক রকম ভাবে পরিবর্তন করা যায়।
গাছের আগার সমস্ত শাখা প্রশাখা এক দিকে বিন্যস্ত করে গাছটিকে অল্প হেলানো অবস্থায় বসালে ঝড়ে প্রভাবিত গাছের মতো দেখাবে।ফাইকাস জাতীয় গাছের সাধারণ ভাবে ঝুরি বের হয়। ডাল থেকে প্রসারিত ঝুরিগুলিকে টবের চারিধারে স্থাপন করা হলেও গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। অল্প বয়সী গাছের ঝুরির জন্য গুটি কলম পদ্ধতির সাহায্য নেয়া যেতে পারে। বনসাই করা গাছের সৌন্দর্য নষ্ট যাতে না হয় তাই অবাঞ্চিত শেকড় ও ডাল কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। এই কাজটি করতে হবে অভিজ্ঞতা ও নিজের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে। বনসাই বর্তমানে সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শিল্প।