২০৩০ সালে রমজান মাস হবে দুইটি

বছরের এই একটি মাসে আমরা আমলের মাধ্যমে সওয়াবকে ৭০ গুণ বাড়িয়ে নিতে পারি।

ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরে একবারই আসে রমজান মাস। কিন্তু কেমন হবে যদি বছরে দুইটি রমজান মাস হয়? হ্যাঁ- আগামীতে এমনই একটি বছর আসবে যেটিতে রমজান মাস হবে বছরে দুইবার।

চন্দ্র বিশেষজ্ঞ মিনহাল খানের বরাতে দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ খবর জানিয়েছে।

মিনহাল খান বলেন, প্রতি বছর চন্দ্র মাস ১০ থেকে ১১ দিন এগিয়ে যায়, সে ধারাবাহিকতায় আমরা ২০৩০ সালে পৌঁছানোর পর জানুয়ারীতে রমজান পাবো, তারপরে আমরা একই পবিত্র মাস ডিসেম্বরে পাবো, মানে এক বছরে দুটি রমজান পেতে যাচ্ছি আমরা।

মুসলিম উম্মাহ বছরে একটি রমজান এবং ঈদুল ফিতর পালন করে অভ্যস্ত, তবে এ গবেষণা মতে ২০৩০ সালে দুটি রমজান পাওয়া যাবে।

চন্দ্র বিশেষজ্ঞরা চন্দ্র ক্যালেন্ডার বিশ্লেষণ করে দেখেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে- ২০৩০ সালে দুটি রমজান হবে।

দুবাই অ্যাস্ট্রোনোমি গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, হাসান আহমেদ আল হারিরি নিশ্চিত করেছেন যে- ২০৩০ সালে দুটি রমজান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী যে ক্যালেন্ডারটি অনুসরণ করি তা সৌরজগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে এবং ইসলামি ক্যালেন্ডারের জন্য চাঁদ অনুসরণ করা হয়, তাই এই বিষয়টি নিশ্চিত যে ২০৩০ সালে ২টি রমজান হবে।

তিনি আরও বলেন যে, ২০৩০ সালের রমজান জানুয়ারির শুরুতে এবং আবার একই বছরের ডিসেম্বরের শেষে হবে।

আড়ও পড়ুন…
শুরু হলো সিয়ামের মাস রমজান। আজ থেকে দিনভর রোজা ও রাতভর ইবাদত বন্দেগি করে মাবুদের সন্তুষ্টি অর্জনের মহানব্রতে মগ্ন মুমিন মুসলমান।

ইবাদতের বসন্তকাল হিসাবে মুসলিম উম্মাহ এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে থাকেন। আল্লাহর বিধান তথা কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা নিজের জীবনে বাস্তবায়নে বিশেষভাবে সচেষ্ট হোন।

হে আল্লাহ! আপনার দরবারে অগণিত শুকরিয়া, আমাদের রমজানের নেয়ামতে ধন্য করেছেন। ইমানের দৌলত দান করেছেন। আমাদের কুরআনের সম্পদ দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ!

হাদিসে পাকে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজান পেল এবং রমজানের রোজা পেল; কিন্তু নিজেকে গুনাহমুক্ত করতে পারল না, তার মতো অভাগা আর কেউ নেই। (তিরমিজি)।

হজরত সালমান ফারসি (রা.) বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষে রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেন, হে লোকেরা, তোমাদের ওপর এসেছে এক মহান ও বরকতময় মাস। এ মাসে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। আল্লাহতায়ালা এ মাসের সিয়াম ফরজ ও (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) রাতে জেগে থাকা ঐচ্ছিক করেছেন।

এতে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। আর যে ব্যক্তি এতে একটি ফরজ পালন করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ পালনের সমান প্রতিদান। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রয়েছে পাপমোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে সমান প্রতিদান দেওয়া হবে। কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না।

প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই। তিনি (সা.) বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটু দুধ, একটি খেজুর বা একটু পানীয় দিয়ে ইফতার করাবে, তাকেই আল্লাহ এ প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি করে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাওসার থেকে পানি পান করাবেন।

এ মাসের প্রথমভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত ও শেষভাগে রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। এটা সমবেদনার মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি তার অধীনস্থর কাজের ভার লাঘব করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (বায়হাকি)।

আমরা যদি সঠিকভাবে সিয়ামব্রত পালন করতে পারি, আশা করি, এ এক মাসের সাধনা শেষে আমাদের কালো জীবনে আলোর ফুল ফুটবে। খোদায়ি নুরে আলোকিত হবে আমাদের অন্তরাত্মা। শান্তি, সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের মতো অতিমানবিক গুণাবলি প্রকাশ পাবে আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুসসিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন। ওহে তোমরা যারা নিজেদেরকে বিশ্বাসী মনে কর, তোমাদের জন্য সিয়ামব্রত আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে। তোমাদের আগে যারা মুমিন ছিল, তাদের ওপরও আমি সিয়ামব্রত ফরজ করেছি। আশা করা যায়, সিয়ামব্রত তোমাদের ভেতর জগৎকে তাকওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দেবে।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩)।

অনেকেই মনে করে, রোজা রাখলেই মানুষ মুত্তাকি হয়ে যাবে। আসলে তা নয়। রোজা মানুষকে মুত্তাকি হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে মাত্র। রোজা হলো মুত্তাকি বা খোদাভীরু হওয়ার কর্মশালা। আনুষ্ঠানিক রোজা তো মাত্র এক মাস; কিন্তু মুমিন থেকে মুত্তাকি হওয়ার সাধনা বারো মাস। আপ্রাণ চেষ্টা ও সাধনা করেই আমাদের মুত্তাকির মর্যাদা অর্জন করতে হবে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এ সিয়ামকে কবুল করুন। আমাদের অন্তরকে আপনার তাকওয়ার নুরে আলোকিত করে দিন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *